ক.জার্নাল ডেস্ক •
মিয়ানমারের জান্তা সরকার আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের আবাসন ব্যবস্থার জন্য ১৫টি নতুন গ্রাম তৈরি করতে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। ৭৫০টি প্লটের ওপর গ্রামগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে।
রাখাইন রাজ্যের জান্তাপ্রধান হিতিন লিনকে উদ্ধৃত করে জান্তাপন্থি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফেরত রোহিঙ্গাদের প্রথমে দুই মাসের জন্য হ্লা ফো খাউং অন্তর্বর্তী শিবিরে রাখা হবে। এর আগে মংডু শহরের তাউং পিয়ো লেটওয়ে ও নাগার খু ইয়া শরণার্থী শিবিরে তাদের যাচাই করা হবে। পরে তাদের নতুন গ্রামে পাঠানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অধিকাংশই দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। তবে নিজ বাড়িঘরে ফেরত না পাঠালে তারা প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক নয়। তাদের দাবি, নাগরিক অধিকার, ভ্রমণ স্বাধীনতা কিংবা অন্যান্য জাতিসত্তার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা যুব সংঘের পরিচালক খিন মং বলেন, জান্তার পাইলট কর্মসূচির উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহ আছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। মিয়ানমার জান্তা উদ্বাস্তুদের প্রতি সৎ থাকলে অবশ্যই তাদের মূল ভূখণ্ডে পুনর্বাসন করতে হবে। নাগরিক অধিকার দিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার জান্তা এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নিজেদের ভালো প্রমাণ করতেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের অভিবাসনমন্ত্রী মিও অংয়ের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। তাদের প্রকল্পের জন্য কিছু রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকারও তারা নেয়। জান্তার তথ্য উপমন্ত্রী মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এএফপিকে বলেন, পাইলট কর্মসূচি এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হতে পারে।
মিয়ানমার সরকার গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আরও পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন প্রকল্পটি ঘোষণার পর জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, রাখাইনের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল হবে না।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এই সপ্তাহের শুরুতে এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে, মিয়ানমারের জান্তা কর্মকর্তাদের বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অধিকার কর্মীরা এর সমালোচনা করেছেন। এমন কাজ জাতিসংঘের নিরপেক্ষতার গুরুতর লঙ্ঘন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার পরে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা এক দশকের বেশি সময় ধরে রাখাইনের শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। তাদের অনেকে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছে। অনেকে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে। কেউ কেউ নিখোঁজ কিংবা বন্দি হয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের শরণার্থী শিবির থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনকে মিয়ানমারের অভিবাসন আইনে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে জান্তা। এখানকার রোহিঙ্গাদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির স্বল্প পরিমাণ অর্থের ওপর তাদের নির্ভর করতে হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প ও ভাসানচরে আশ্রিত আছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছেন, নাগরিকত্ব না পেলে তাঁরা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-